আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অগণিত চোখ আকাশে খুঁজবে এক ফালি বাঁকা চাঁদ। চোখে পড়লেই বয়ে যাবে আনন্দের হিল্লোল।
ঈদ কাল বুধবার নাকি পরদিন বৃহস্পতিবার হবে, তা-ও নির্ভর করবে চাঁদ দেখা যাওয়া ওপর। আজ মঙ্গলবার যদি শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠে, তবে কাল বুধবার ঈদ হবে। আর যদি চাঁদ দেখা না যায়, সে ক্ষেত্রে রোজা ৩০টি পূর্ণ হবে। ঈদ হবে বৃহস্পতিবার।
গত এক মাস ছিল সংযমের। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃপালাভের মধ্য দিয়ে বিগত জীবনের পাপরাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় সিয়াম সাধনা করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। কোরআন পাঠ করেছেন, দানখয়রাত করেছেন, মগ্ন থেকেছেন ইবাদত-বন্দেগিতে। এর পাশাপাশি ছিল ঈদের প্রস্তুতি। নয় দিনের টানা ছুটি সেই প্রস্তুতিকে আরও আনন্দময় করেছে। এখন অপেক্ষা চাঁদের।
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামি পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা (পুরস্কার রজনী) এবং বাংলা ভাষায় ‘চাঁদরাত’ বলা হয়। হতে পারে আজই সেই চাঁদরাত।
ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেওয়া ইসলামি বিধান। বাংলাদেশে ঈদের দিন নির্ধারিত হয় দেশের কোথাও না-কোথাও চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে।
ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদের জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে আটটায় জাতীয় ঈদগায়। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে একই সময়ে বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবেন। সাদাপোশাকে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা তৎপর থাকবেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে এবং জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আরও দুটি পৃথক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সেখানে ঈদের জামাতের সব প্রস্তুতি।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীসহ বড় শহরের সরকারি হাসপাতাল, এতিমখানা ও কারাগারগুলোতে উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, ঈদসংখ্যা। টিভি চ্যানেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক মানুষ ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের গ্রাম গুলোও ঈদ-উৎসবে প্রাণচঞ্চল থাকে। গ্রামবাংলার অনেক স্থানে ঈদের মেলা বসে। মূলত পল্লিবাসীর এ এক মিলনমেলা। মেলায় আসে লোকশিল্পজাত নানা পণ্যদ্রব্য, খাবার জিনিসও আসে যেমন-চিড়া, মুড়ি, খই, মণ্ডা, মিঠাই ইত্যাদি। ঈদ উপলক্ষে কোথাও কোথাও নৌকাবাইচ আবার কোথাও কোথাও খেলাধুলারও আয়োজন করা হয়। হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা ইত্যাদি খেলা দর্শকদের পর্যাপ্ত আনন্দ দেয়।