কবি সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মদিন আজ

কবি সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মদিন আজ

স্বাধীন বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত, নারীর মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোধা মহিয়সী কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মদিন আজ। কবিতাকে শাণিত হাতিয়ার করে আজীবন কথা বলেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন আপসহীন।

কবি সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেন তিনি। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন তিনি। মাত্র বারো বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সাহিত্যপাঠে ছিল স্বামীর অনুপ্রেরণা, যা তাঁকে পরবর্তীতে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। ১৯২৩ সালে রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছেঃ সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, মায়া কাজল,  শান্তি ও প্রার্থনা, দিওয়ান, উদাত্ত পৃথিবী, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণকাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের ডায়েরি’। সুফিয়া কামাল ৫০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, সোভিয়েত লেনিন, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।

কবি সুফিয়া কামাল তাঁর সাহিত্য চর্চ্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস ও আপসহীন ভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এ সময় একদল তরুণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গঠন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন তিনি। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমখা এ ইমতিয়াজ’ উপাধি বর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংগঠক। ১৯৭০ সালে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা।’ তিনি দেশবিভাগের আগে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

কবি সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। তিনিই প্রথম বাঙালী নারী যাঁকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলার মানুষ তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে।

কবির স্মরণে দিনের কর্মসূচিঃ দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বাংলা একাডেমিতে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছে। ছায়ানটে আয়োজন করা হয়েছে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।