মানবতা, প্রেম, দ্রোহ, চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নিজের ক্ষুরধার লেখনীর আঁচড়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যে। গদ্য, পদ্য, উপন্যাস, সঙ্গীত- সব শাখায় তার আগমন ছিল ধূমকেতুর মতো। বাংলা সাহিত্যে তার আগমন প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের এক গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’ আজ ১২ ভাদ্র। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম প্রয়াণ দিবস। জাতীয় কবির প্রণয় দিবস আজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সারা দিনব্যপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল। এই অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্বরা পড়ে শোনাবেন নজরুলের দুর্লভ কিছু চিঠি।
এনটিভির অনুষ্ঠান ও যোগাযোগ বিভাগের উর্ধ্বতন নির্বাহী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে নজরুল স্মরণে নাটক, গান, আলোচনা অনুষ্ঠান ও দুর্লভ চিঠি পাঠ।
তিনি বলেন, “কবি নজরুল বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মানুষের কাছে চিঠি লিখেছেন। নজরল স্মরণ অনুষ্ঠানমালায় অত্যন্ত দূর্লভ সেই সব চিঠির কয়েকটি পড়ে শোনাবেন আলী যাকের, আল মনসুর, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিমূল মুস্তাফা, আহকামউল্লাহ মিঠু, চিত্রলেখা গুহ, মুনিরা ইউসুফ মেমী প্রমুখ।”
তিনি আরো জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে প্রচার হবে ‘নজরুলের চিঠি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি।
ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’। হুমায়ূন ফরিদের প্রযোজনায় এ অনুষ্ঠানে নজরুলের বিভিন্ন ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন- খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান, ইয়াসমীন মুশতারী, ফেরদৌস আরা ও এম এ মান্নান।
দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘শিউলীমালা’। কাজী নজরুল ইসলামের গল্প অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ করেছেন অনন্ত হীরা এবং পরিচালনা করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় করেছেন- ইন্তেখাব দিনার, জয়া আহসান, জামাল উদ্দীন হোসেন প্রমূখ।
রাত ৯টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘ধূমকেতু’। কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় গান ‘আমায় নহে গো, ভালোবাসো মোর গান’ এর অনুপ্রেরণায় নাটকটির নাট্যরূপ করেছেন সারোয়ার রেজা জিমি। পরিচালনা করেছেন তুহিন হোসেন। অভিনয়ে- আফরান নিশো, তানভীন সুইটি, নিশা, দিলারা জামান, এ কে আজাদ সেতু প্রমূখ।
রাত ১১টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে নজরুলের মৃত্যু ভাবনা দর্শন নিয়ে বিশেষ আলেখ্যানুষ্ঠান ‘আর অভিমান জানাবো না’। হাসান ইউসুফ খানের প্রযোজনায় এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন- শারমিন লাকী, আলোচক নাসিম আহমেদ, কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা ও সুজিত মোস্তফা।
শরীরী পদচারণা না থাকলেও শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় আজও কাজী নজরুল ইসলামের ‘উন্নত মম শির’। তাই কাজী নজরুল ইসলাম এখনও প্রাসঙ্গিক। কবির জীবনকাল ৭৭ বছরের। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারানোর আগ পর্যন্ত তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে কবি শিল্প-সাহিত্যকে যা দিয়েছেন, তা বাংলা তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলেই অমূল্য এক সম্পদ।
১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কখনও আপস করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ও বৈভবের কাছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। ভালোবাসা, মুক্তি, বিদ্রোহ ইত্যাদি বিষয় তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক।
১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।