মাত্র ২৩ মিনিটে সুখী হোন


আপনার সুখ কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে হয়তো কিছু সময়ের জন্য  আপনি আপনার সুখের স্মৃতিগুলো খুঁজবেন।  সেই ভালো সময়ের কথা ভেবে আপনার মুখে হাসির রেখা ফুঁটে ওঠবে।তবে বিজ্ঞান বলছে, আপনার জানার বাইরেও রয়েছে সুখের আরো জগৎ ।

সুখ গবেষক, লেখক ও বক্তা শান আখোর বলছেন, কেউ তার মস্তিষ্ককে অধিক ইতিবাচক করতে চাইলে দিতে পারেন প্রশিক্ষণ। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বর্তমানে কারো ইতিবাচকতার স্তর বাড়াতে পারেন তখন তার মস্তিষ্ক যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেটিকে আমরা সুখের সুবিধা বলছি। আপনার মস্তিষ্ক নেতিবাচক, নিরপেক্ষ কিংবা চাপের মধ্যে থাকার চেয়ে ইতিবাচক, কর্মসক্ষম থাকা অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। এতে আপনার বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা আর শক্তিমত্তার স্তর বাড়তে থাকে।’

সুখের সঙ্গে একটি সরাসরি সংযোগ রয়েছে আপনার মস্তিষ্কের। তিনি আরও বলেন, মস্তিষ্কের এই পরিস্থিতি আপনার উৎপাদনশীলতা ৩১ ভাগ বাড়াতে সক্ষম এবং কাজকর্মে আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, সকালের ২৩ মিনিটের রুটিনের মাধ্যমে আমরা সুখের ভাগফলকে করতে পারি দ্বিগুণ । নিজেকে সুখী করতে ব্যস্ত সময় থেকে বের করুন কেবল এই সময়টুকু ।

১. সকালে সর্বপ্রথম যে তিনটি জিনিসের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ তা লিখুন।

এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ভালো থাকার একটি সাধারণ উপায় হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করে।তাই সকালের প্রথম কাজ হচ্ছে, যে তিনটি জিনিসের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ তা লিখতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পাবার জন্য এই কাজটি টানা ২১ দিন চালিয়ে যেতে হবে। এই কাজটি আমাদেরকে  জীবনে ইতিবাচকতার দিকে দৃষ্টিপাত করতে সাহায্য করবে। যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক আপনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা দিবে অধিক আশাবাদী হতে ।

২. আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিক একটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

জার্নালিং হচ্ছে একটি শীতল ব্যায়াম। যারা এটি করেছেন তারা এর সাক্ষী হবেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঘটে যাওয়া ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা দিন এবং উল্লেখ করুন বিস্তারিত বর্ননার মূল পয়েন্ট ।

৩. প্রতিদিন ১৫ মিনিট ব্যয় করুন হৃদপিন্ড সংক্রান্ত কার্যকলাপ চলনের জন্য ।

আমাদের অনেকে প্রতি সকালে এটি করতে লক্ষ্যস্থির করেন, কিন্তু বেশি সময় ব্যায়ামে বরাদ্দ রাখতে গিয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু ব্যায়াম কেবল আমাদের কর্মক্ষমই রাখে না, সুখীও করে।

আখের বলেন, একটি মজার হৃদপিন্ডসংক্রান্ত কার্যকলাপে এক ঝলক সংক্ষিপ্ত অনুভূতি, যেটি পার্কে প্রাণবন্তভাবে হাঁটা কিংবা আপনি মজা পান এবং আপনার প্রিয় কোনো গানের সঙ্গে নৃত্য করতে পারেন সাত মিনিটের কোনো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে।

সকালের ব্যায়াম আপনার মস্তিষ্ককে আচরণগত বিষয়গুলো বিশ্বাস করতে শেখায়। যার ফলে আপনি সারাদিন ইতিবাচকভাবে কাজ করতে পারবেন।

৪. নিঃশ্বাস গ্রহণ ও ছাড়ার ওপর ২ মিনিট পর্যবেক্ষণ করুন।

মেডিটেশন সব সময় ব্যক্তিগতভাবে একটি কঠিন অনুশীলন। তবে আখোর বলছেন, এটি সঠিকতার হার বাড়াতে, সুখের মাত্রা উন্নত করতে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।

কেবল ২ মিনিট আপনার নিঃশ্বাস পর্যবেক্ষণ করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেবে একই সময়ে একটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে। ঘটনাক্রমে নিজের উপস্থিতি আরো ভালো অনুধাবন করতে পারবেন পূর্বের চেয়ে।

৫. আপনার বন্ধু অথবা পরিবারের জন্য কিছু সদয় শব্দ লিখুন।

আপনি কী স্মরণ করতে পারছেন, সর্বশেষ কবে কোনো বন্ধুর কাছ থেকে ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘চমৎকার’ শব্দটি ই-মেইল পেয়েছেন? এটি দিনের অন্যান্য সকল কিছুকে আরো আলো ছড়ায় এবং খারাপ জিনিস ভুলে গিয়ে আপনার মুখে হাঁসি ফোঁটায়। আপনি কারো কাছ থেকে উদারতা পাবার প্রকাশ ভঙ্গিটির প্রভাব কল্পনা করুন।

সুতরাং বন্ধু, পরিবারের সদস্য কিংবা সহকর্মী নিয়ে ইতিবাচক কিছু লিখুন এবং দেখুন আপনি কেমন অনুভব করেন। যারা এটি করে থাকেন তারা শক্তিশালী সামাজিক সংযোগের জন্য ইতিবাচক নেতৃত্ব দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী সুখের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্বাভাস এটি ।

আপনার জীবনের চতুর্দিক পরিবর্তন করতে প্রয়োজন এই ২৩ মিনিট । এই কার্যক্রমের অধিকাংশই চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং জগতে কেউ অলস থেকে কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি।