সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সোনু নিগম সংগীত সম্পর্কে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,‘বর্তমানে গানের শ্রোতা পাল্টে গেছে। এখনকার প্রজন্ম গান শোনেই না। বলা ভালো, গান তারা বোঝেও না। বোঝার চেষ্টাও করে না। তাদের চটজলদি মনোরঞ্জন চাই। আর এই চটজলদি মনোরঞ্জনের যুগে ভালো গান দমবন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে।’
এছাড়াও তিনি আরও জানান, ‘আসলে সেই শ্রোতা আর নেই। আগে টেলিভিশনে প্রাইভেট অ্যালবাম দেখানো হতো। শ্রোতারা সেই সমস্ত অ্যালবাম শুনে দোকানে গিয়ে গানের অ্যালবাম কিনতেন। এখন তো শুধু ফিল্মি গান ছাড়া কোনো মিউজিক চ্যানেলে অন্য কিছু চলেই না। রেডিওতেও প্রাইভেট অ্যালবামের গানও এখন আর সেভাবে বাজানো হয় না। চারিদিকে এত এফএম চ্যানেল। কিন্তু কোথাও সিনেমার গান ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।’
কথায় কথায় তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর ভালো গান হচ্ছে কই? এখন সিনেমার গান তৈরি হচ্ছে, বড়জোর যার আয়ু এক সপ্তাহ। তারপর গানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে ভালো সুর এখন আর শোনা যায় না। অথচ নব্বইয়ের দশকের গান আজও হিট। মানুষ পুরোনো গান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুনছেন।’
বেশ কিছুদিন আগে সোনু নিগমকে একদিন রাস্তায় ভিখারি সেজে গান গাইতে দেখা গিয়েছিল। হঠাৎ সবাইকে চমক দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি হেসে উত্ত্র দেন, ‘আরে, ওটা একটা মজা। আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ফন্দি করে স্রেফ মজা করেছিলাম। অন্য কিছু নয়।’
বর্তমান সময়ে রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা অনেক প্রতিভা প্রসঙ্গে সোনু নিগম বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে অনেকের এক-আধটু নামডাক হওয়ার পর আর মাটিতে পা পড়ে না। একটা কি দুটো গান হিট হলো কি হলো না, অমনি নিজেদের স্টার ভাবতে শুরু করে অনেকে। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করতে শুরু করে। ফল যা হওয়ার তাই হয়। আমি তো নিজে এখনো রোজ রেওয়াজ করি। নিজেকে নতুন শিল্পী ভাবি। আমি মনে করি, গানের প্রতি শ্রদ্ধা থাকাটা প্রয়োজন। স্টার হওয়া বড় কথা নয়। সঠিক শিল্পী হওয়াটাই বড় ব্যাপার।’
এছাড়াও রিয়েলিটি শোয়ের বিচারকরা সারা দেশ ঘুরে ঘুরে যে সমস্ত নতুন প্রতিভাকে রিয়েলিটি শোর মঞ্চে তুলে আনেন তাদের মধ্যে সঠিক গুণ না থাকলে তারা যে এত বড় প্ল্যাটফর্মে জায়গা পেত না এটাও বিশ্বাস করেন তিনি।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সোজাসাপ্টা ভাষায় তিনি জানান, ‘আমি এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করি না। পাকিস্তানের অনেক ভালো ভালো শিল্পী ভারতে এসে কাজ করেছেন। তাঁদের ভালো গান ও অভিনয় আমাদের সমৃদ্ধ করেছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শিল্পীর কোনো দেশ হয় না। শিল্পীর কোনো জাত হয় না। শিল্পীরা একটাই জাতি, তাঁরা শুধু শিল্পী। যাঁদের আমরা কাজ দিতে পারব না, তাঁদের কাজ কেড়ে নেওয়ার অধিকারও আমাদের নেই। তবে হ্যাঁ, আমার কাছে সবার আগে দেশ। আর সেই দেশের ওপর হামলা হলে আমি প্রতিবাদও জানাব।’